নতুন চালকদের জন্য গাড়ি চালানো ব্যাপারটা অনেক বেশি খুশির আর উত্তেজনাপূর্ণ হয় । গাড়ির টেস্ট ড্রাইভিং পাস করার সাথে সাথে যেন আর তর সয় না নতুন চালকদের। তারা গাড়ি নিয়ে প্রথমদিনেই বের হয়ে পড়েন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যে। তাদেরকে বলবো , আত্মবিশ্বাসী হওয়া ভালো কিন্ত অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী মনোভাব ডেকে আনতে পারে সমূহ বিপদ। সবসময় মনে রাখবেন , গাড়ির লাইসেন্স পেয়ে যাওয়া মানে আপনি একজন গাড়ি চালানোর জন্য যোগ্য চালক , আদর্শ চালক কিন্ত নন। একজন আদর্শ বা ভালো মানের চালক হয়ে উঠতে আরো সময় বাকি রয়েছে। নতুন চালকদের অবশ্যই কিছু ব্যাপার মেনে চলতে হবে। জেনে নিন নতুন চালকদের জন্য কিছু ড্রাইভিং টিপস ।
১। নিয়মিত প্র্যাকটিস করুন
যেকোন বিষয়ে পারদর্শীতা অর্জন করতে হলে সে বিষয়ে নিয়মিত চর্চা করতে হয়। গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে ও এর ব্যাতিক্রম নয়, এক্ষেত্রেও আপনাকে প্রচুর পরিমাণে চর্চা করতে হবে। প্রথমেই গাড়ি নিয়ে ব্যস্ত সড়কে না গিয়ে তুলনামূলক কম ব্যস্ত রাস্তায় একা গাড়ি প্র্যাকটিস করুন। এতে করে আপনার ড্রাইভিং স্কিল বৃদ্ধি পাবে।
২। সাথে রাখুন ইন্সট্রাক্টর
গাড়ি চালানোর শুরুতে নতুন চালকদের জন্য দরকারি ড্রাইভিং টিপস হচ্ছে প্রথম কয়েক দিন সাথে ইন্সট্রাক্টর রাখুন। অথবা গাড়ি চালানো বিষয়ে খুব অভিজ্ঞ কাউকে পাশে রাখুন। এতে করে আপনি এবং আপনার যাত্রী উভয়ই নিশ্চিন্তে ভ্রমন করতে পারবেন।
৩। বিভিন্ন কোর্সে যোগদান করুন
গাড়ির লাইসেন্স পেয়ে অনেকে নিজেদের ভালো চালক ভাবতে থাকেন। কিন্ত আসলে ব্যাপারটা এরকম না। লাইসেন্স পাওয়ার পরও একজন চালককে আরো অনেক কিছু শিখতে ও জানতে হয়। মনে রাখবেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পরেই আপনার দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যায় ৯৯ শতাংশ। নতুন চালকদের আ্যডভান্স স্কিল লেসন, ডিফেন্সিভ ড্রাইভিং কোর্স ইত্যাদি নানান ধরনের কোর্স করে নেওয়া উচিৎ। অনলাইনেও এসব কোর্সগুলো করানো হয়। ঘরে বসে বসেও গাড়ি চালানো সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান অর্জন করতে পারেন।
৪। ড্রাইভিং টিপস বুক দেখে স্টিয়ারিং ঠিকভাবে ধরতে শিখুন
গাড়ি তো অনেকে ভালো চালাতে পারেন কিন্ত স্টিয়ারিং হুইল ধরার সঠিক নিয়ম জানেন না। স্টিয়ারিং হুইল ধরার সঠিক নিয়ম হচ্ছে, ঘড়ির কাঁটার ৯ থেকে ৩ অথবা ঘড়ির কাঁটার ৮ থেকে ৪ এরকম নিয়মে ধরা। এই নিয়মে স্টিয়ারিং হুইল ধরলে আপনি ভালোভাবে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আর এভাবে স্টিয়ারিং হুইল ধরার অভ্যাস করলে আপনার হাতও কম ব্যাথা হবে।
৫। ‘পি’ প্লেট/ ‘এল’ প্লেট
নতুন চালকদের উচিৎ সবসময় পি প্লেট ঝুলিয়ে রাখা। এখানে ‘পি’ দিয়ে প্রবিশন পিরিয়ড বোঝায়। সবাই যাতে বুঝতে পারে যে আপনি নতুন চালক এবং এখনো গাড়ি চালোনা শিখছেন। বা এল প্লেটও ব্যবহার করতে পারেন।
৬। সামনের আয়না ঠিক করে গাড়ি স্টার্ট করুন
নতুন চালকদের ক্ষেত্রে এই ভুল হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। অনেক সময় পুরানো এবং অভিজ্ঞ চালক গাড়ি স্টার্ট করার সময় সামনের আয়না ঠিক করে বসতে ভুলে যান। নিরাপদে গাড়ি চালানোর জন্য সামনের আয়না ঠিক করে বসা অনেক বেশি জরুরী। আর যদি গাড়ি চালানোর সময় আয়না ঠিক করতে যান তাহলে বেঁধে যেতে পারে বিপত্তি। তাই গাড়ি চালানোর সময় না , গাড়ি স্টার্ট দেয়ার আগে আয়না ঠিক করে নেবেন।
৭। ইন্ডিকেটর লাইটের ব্যাবহার শিখুন
রাস্তায় দূর্ঘটনা ঘটতে লাগে এক সেকেন্ড। ছোটখাটো এসব দূর্ঘটনা এড়াতে শিখুন ইন্ডিকেটরের ব্যবহার । ডানে, বায়ে অথবা লেন পরিবর্তন করার সময় অবশ্যই ইন্ডিকেটর দিয়ে সংকেত দেবেন যাতে পেছনের চালক বুঝতে পারেন যে আপনি কি চাইছেন। অনেক নতুন চালকেরা ইন্ডিকেটর সম্পর্কে জানেন না , যেটা সত্যি হতাশাজনক। আপনাকে গাড়ি চালানো শিখতে হলে অবশ্যই ইন্ডিকেটর লাইট জ্বালানোটা একটা নিত্য অভ্যাসে পরিণত করে ফেলতে হবে।
৮। যানবাহনের সাথে সঠিক দূরত্ব রাখতে শিখুন
নতুন চালকদের প্রায়ই একটি সমস্যায় পড়তে দেখা যায় সেটা হচ্ছে রাস্তায় অন্যান্য যানবাহনের সাথে সঠিক দূরত্ব বজায় রাখতে না পারা । ধৈর্য্য সহকারে গাড়ি চালাতে শিখে নেবেন এবং গাড়ি চালানোর সময় অন্য গাড়ি এবং সিগন্যালে আগে থেকে থামা জেনে নেবেন।
৯। পার্কিং করতে শিখুন
রিভার্স পার্কিং একজন নতুন চালকের জন্য কঠিন কাজ। সঠিকভাবে পার্ক করতে অভিজ্ঞ গাড়ি চালকদেরও অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
১০। গতির ব্যবহার শিখুন
নতুন ড্রাইভাররা গাড়ির গতি নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে ভীষণ ভালোবাসেন , বিশেষ করে অল্প বয়সী বা টিনেজ ড্রাইভাররা। সত্যি বলতে গাড়ি জোড়ে চালানোর চেয়ে সঠিক নিয়মে চালানো বেশি জরুরী।
১১। রাগ/ভাষার সংবরন করতে শিখুন
রাগের মাথায় করা কোন কাজই সঠিকভাবে হয় না। সবসময় মাথা ঠান্ডা রেখে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করুন।
১২। ফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন
‘একটি দূর্ঘটনা , সারা জীবনের কান্না’- এই লাইনটি মানুষ কতটুকু বুঝতে পারে , জানা নেই। কিন্ত যারা জীবনের মায়া করেন তারা হয়তো উপলব্ধি করতে পারবেন। দূর্ঘটনায় কি শুধু মানুষের জীবন যায় – মানুষ পঙ্গু হয়ে যেতে পারে, অন্ধ হয়ে যেতে পারে। এসব ব্যাপার মাথায় রেখে গাড়ি চালানোর সময় ফোন ব্যবহার করবেন না।
১৩। নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকুন
জীবন নিয়ে বেঁচে থাকতে চাইলে নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর গাড়ি চালানোর আগে তো একদমই নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করবেন না। নতুন চালকদের জন্য আদর্শ ড্রাইভিং টিপস হচ্ছে, কখনো নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ির স্টিয়ারিং ধরবেন না। ট্র্যাফিক আইন সম্পর্কে জানুন এবং মানুন।
সর্বোপরি সবসময় ট্র্যাফিক আইন এবং ট্র্যাফিক পুলিশের কথা মানতে চেষ্টা করুন। রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বের হবার আগে সব কাগজপত্র চেক করে নেবেন।
আপনারা যারা নতুন চালক তারা এই ড্রাইভিং টিপস মেনে চলতে চেষ্টা করলে সারাজীবন আর কোন সমস্যা বা বড় কোন দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকবে না। আপনার শখের গাড়ি থাকুক নিরাপদে।
১। গাড়ীর বৈধ ও হালনাগাদ কাগজপত্র ছাড়া কখনই গাড়ী নিয়ে রাস্তায় বের হবেন না। গাড়ী চালানোর আগে ব্রেক, চাকার হাওয়া, হর্ন, ইন্ডিকেটর, তেল/ গ্যাস ও লুব্রিক্যান্টের পরিমাণ ইত্যাদি পরীক্ষা করুন।
২। নিরাপদ না মনে হলে কখনই ওভারটেকের মত ঝুঁকিপূর্ণ কাজটি করবেন না। রাস্তার বাঁকে, ব্রিজে, বাসস্টপে, বাজারের মধ্যে, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সামনে ওভারটেক করবেন না।
৩। সঠিক সময়ে সঠিক সংকেত এবং হর্ন ব্যবহার করুন। মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ ইত্যাদি স্থানের সামনে হর্ন বাজাবেন না। অনুমতি স্থান ছাড়া যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানো – নামানো করবেন না।
৪। অন্য সড়ক ব্যবহারকারীদের প্রতি সৌজন্যমূলক আচারণ করুন। একজন দায়িত্বশীল চালক হিসাবে কখনই শুধুমাত্র নিজের এবং গাড়ীর যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়ই চিন্তা করবেন না, অন্যান্য সড়ক ব্যবহারকারী বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধি, পথচারী, সাইকেল চালক, রিক্সা চালক ইত্যাদির নিরাপত্তার বিষয়টিও দেখবেন।
৫। গাড়ী চালানোর সময় পূর্ণ মনোযোগ দিন। গাড়ী চালোনাকালে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না। কোন অবস্থাতেই কোন ধরনের মাদক দ্রব্য বা ঘুম/ ঝিমুনি আসে এ ধরণের ঔষধ খেয়ে গাড়ী চালাবেন না।
৬। ঘন ঘন লেন পরিবর্তন করবেন না। সকল সড়ক সংযোগে অতিরিক্ত সাবধানটা অবলম্বন করুন। বিশেষ করে প্রধান সড়কে প্রবেশের আগে অবশ্যই থামুন, দেখুন তারপর চলুন। প্রধান সড়কে চলাচলরত গাড়ীকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৭। রাতের বেলা গাড়ী চালানোর সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করুন। বাসের ছাদে বা ট্রাকে যাত্রী তুললেন মানে আপনি সচেতন ভাবে একটা অপরাধ করলেন।
৮। বৃষ্টির মধ্যে গাড়ী চালানোর সময় গতি স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনুন।
৯। আপনার বাসে বা ট্রাকে অতিরিক্ত যাত্রী বা মালামাল বহন করবেন না। দুর্ঘটনা ডানে বামে দুই দিক থেকেই ঘটতে পারে সুতরাং সাবধান উভয় দিক থেকেই লক্ষ্য রাখুন।
১০। ভুল করা মানুষের স্বভাব । আপনি ভুল না করলেও মনে রাখবেন, অন্যান্য সড়ক ব্যবহার কারীরা ভুল করতেই পারে। গাড়ী চালানোর সময় এ ধরণের ঘটনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখুন।
১১। ট্রাফিক আইন কানুন জানুন এবং তা যথাযত ভাবে মেনে চলুন।
১২। গাড়ী সবসময় সাবধানে চালাবেন। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। মনে রাখবেন, একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।